ছবি: ডয়চে ভেলে

মধ্য আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলীয় দেশ ইকুয়াটোরিয়াল গিনির একটি সামরিক ঘাঁটিতে ধারাবাহিক কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

গত রবিবার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল গিনির শহর বাটা। আজ মঙ্গলবারও (৯ মার্চ) ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হচ্ছে মৃতদেহ।

সামরিক ঘাঁটিতে ঘটা এসব বিস্ফোরণ অন্তত ৬১৫ জন আহত হয়েছে। তার মধ্যে শতাধিক ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর।

বিস্ফোরণের তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগুন থেকে নকোয়ানটোমা সামরিক ঘাঁটিতে ওই বিস্ফোরণ ঘটা শুরু হয়।

মধ্য আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ও সমৃদ্ধ শহর বাটা। ইকুয়াটোরিয়াল গিনিরও সবচেয়ে বড় শহর এটি। উপকূলবর্তী এই শহরে প্রচুর তেল মজুত আছে। অর্থনীতিও তেলের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে। রবিবার বেলা ১টা নাগাদ সেখানে প্রথম বিস্ফোরণ হয়। এরপর পরপর চারবার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে বাটা। বিস্ফোরণে ভেঙে পড়ে বড় বড় বাড়ি, লোহার স্ট্রাকচার। মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় শহরের একটি বড় অংশ। এর আগে বৈরুতে ঠিক এভাবেই বিস্ফোরণ হয়েছিল।

তদন্তে নেমে প্রশাসন জানতে পারে, শহরের ভেতরেই অবস্থিত একটি সেনা ছাউনিতে প্রচুর পরিমাণ ডিনামাইট রাখা ছিল। সেখান থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে। টেলিভিশনে দেশের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, অবহেলার কারণেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে।

ঘটনার পর থেকেই উদ্ধার কাজ শুরু হয়। স্থানীয় মানুষ উদ্ধারে হাত লাগান। ধ্বংসস্তূপ থেকে একের পর এক শিশু, নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার (৮ মার্চ) দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আজ সকালের মধ্যে সেই সংখ্যা ৯৮ হয়ে যায়। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন অনেকে।

দেশটির প্রশাসন জানিয়েছে, যাদের গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটেছে, তাদের সকলকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তবে বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেনা ছাউনিটির। বহু সেনার মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট তেওদোরো ওবিয়াং এঙ্গেমা জানিয়েছেন, দিনের বেলা ‘অবহেলাজনিত’ কারণে ব্যারাকের গুদামে এসব বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণের ধাক্কায় বাটার প্রায় সব বাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ত্রাণসহ আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

১৪ লাখ জনসংখ্যার দেশ গিনি খনিজ তেল নির্ভর একটি দেশ। করোনাভাইরাস মহামারির পাশাপাশি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতি সঙ্কটে পড়েছে। তেল রফতানিই এর অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি।

১৯৬৮ সালে স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত ইকুয়াটোরিয়াল গিনি স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল। ওবিয়াং ১৯৭৯ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন। আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে একটানা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট তিনি। -ডয়চে ভেলে ও রয়টার্স