
করোনাভাইরাসের টিকার বিতরণ নিয়ে বিশ্ব ‘বিপর্যয়কর নৈতিক অবক্ষয়ের’ দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। তিনি বিভিন্ন দেশ ও টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে বিশ্বব্যাপী আরও সুষ্ঠুভাবে টিকা বিতরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবিসি।
টিকা বিতরণে অসমতার উদাহরণ দিয়ে গেব্রিয়েসুস বলেন, ৪৯টি ধনী দেশ তিন কোটি ৯০ লাখের বেশি ডোজ টিকা পেয়েছে। আর একটি গরীব দেশ মাত্র ২৫ ডোজ টিকা পেয়েছে। ধনী দেশগুলো যেখানে তাদের সব নাগরিককে যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ে টিকা দিতে চাইছে, সেখানে গরিব দেশগুলোর জন্য টিকা পাওয়া হয়ে উঠেছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
গরিব দেশগুলোও যাতে টিকা পায়, সেই লক্ষ্যেই গত এপ্রিলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি বা কোভ্যাক্স নামের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়, যাতে অর্থায়ন করছে বিভিন্ন দাতা দেশ, বিশ্ব ব্যাংকের মত বহুজাতিক সংস্থা এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মত দাতব্য সংস্থা।
আগামী মাস থেকে ডব্লিউএইচও-র কোভ্যাক্স জোটের টিকা সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা। বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে উঠেছে জোট কোভ্যাক্স। ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস ( সিইপিআই) এর নেতৃত্বাধীন এই জোট নতুন বছরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশে ১৩০ কোটি ডোজ টিকা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এরই মধ্যে তারা ২০০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে।
কিন্তু এখন ধনী দেশগুলোর মধ্যে টিকা মজুদের মানসিকতা দেখা যাচ্ছে বলে কয়েকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। স্বল্প-আয়ের দেশগুলোকে পেছনে ফেলে রেখে উচ্চ-আয়ের দেশগুলো আগে নিজেদের চাহিদা মেটাতে টিকা মজুদ করতে তৎপর হয়েছে। সে কারণে সমতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণের উদ্যোগ এখন ‘মারাত্মক ঝুঁকিতে’ পড়েছে বলে মনে করছেন ডব্লিউএইচও প্রধান গেব্রিয়েসুস।
ডব্লিউএইচও’র নির্বাহী বোর্ডের বার্ষিক এক ভার্চুয়াল বৈঠকে সোমবার তিনি বলেন,‘টিকা মজুদ করা, টিকার বাজারে বিশৃঙ্খলা, অসহযোগিতামূলক আচরণ এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধা সৃষ্টি হওয়ায় কোভ্যাক্সের টিকা বিতরণে দেরি হতে পারে এবং ঠিক ওই পরিস্থিতিই দেখা দিতে পারে যা এড়ানোর জন্য কোভ্যাক্স জোট গঠন করা হয়েছিল।’