আরিফুল ইসলাম, শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


ভাই, রাস্তায় তো ধুলাবালি নাই। আপনি মুখে মাস্ক পড়ে আছেন কেন?.আপনার বিরক্ত লাগে না?.

আপনি জানেন না ভাই, করোনা নামক এক ভাইরাস এই পৃথিবীতে দেখা দিছে। যাকে এই ভাইরাস ধরতেছে, সে-ই নাকি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত দেহে ঠান্ডা, জ্বল,গলাব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু এগুলোই না, এর ফলে মারাও যাচ্ছে মানুষ। কি আর করার জীবন তো বাঁচানো লাগবে। তাই মুখে মাস্ক আর ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য পকেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজারও রেখে দিছি। বাঁচতে হলে আগেই সচেতন হোন।

চারপাশে শুধু করোনার খবর। টিভিতে, সংবাদপত্রে,অনলাইন নিউজ পোর্টালে,সামাজিক মাধ্যমে, ইনবক্সে। সরকার সকল জনগণকে মাস্ক পড়ে,হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে চলাচলের নির্দেশ করলেন।কিন্তু এক শ্রেণীর লোক এই করোনা ভাইরাসকে উপহাস করছে। তারা বিশ্বাস করতেই চাচ্ছে না করোনা ভাইরাস বলে পৃথিবীতে কিছু আছে।

এদিকে প্রথমে একজন দু’জন করে আক্রান্ত হলেও এখন হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। সরকার করোনা মহামারি ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে।

একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। দেখলাম রাস্তায় এক বৃদ্ধ ব্যক্তি শুয়ে আছে। কিন্তু পরে শুনতে পেলাম সেই ব্যক্তি অজ্ঞান অবস্থায় রাস্তায় পরে আছে।করোনায় আক্রমণ হওয়ার ভয়ে তাকে কেউ সাহায্য করছে না।একজন অজ্ঞাত লোক বৃদ্ধ লোককে হাসপাতালে নেয়ার জন্য এ্যাম্বুলেন্সকে খবর দিয়েছে।

করোনা ভাইরাসের নিষ্ঠুরতা কেবল হাসপাতালে যাওয়ার পরেই উপলব্ধি করা যায়। চতুর্দিকে করোনা আক্রান্ত রোগী অসহায় ভাবে পরে আছে হাসপাতালের বেডে। তাদেরকে নার্স এবং ডাক্তার ছাড়া সেবা করার মতো কেউ নেই। করোনা ভাইরাস তাদেরকে আদালা করে দিয়েছে পরিবার থেকে। মা যেতে পারছে না তার শিশুর কাছে, স্ত্রী যেতে পারছে না তার স্বামীর কাছে। এ যেন এক বিচ্ছিন্ন এবং নিষ্ঠুর সমাজ। এই বিচ্ছিন্ন সমাজকে বিনির্মানে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে ডাক্তার সমাজ।

করোনার হাত থেকে এই বিশ্বটাকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তার জন্য চলছে গবেষণা, পরিক্ষা -নিরীক্ষা। তবুও সবার মাঝে একটা সংশয় -ঔষধ তৈরি হলে সবাই কি সেটা পাবে? নাকি ক্ষমতা এবং অর্থের বলে এক শ্রেণীর মানুষ সব চিকিৎসা সামগ্রী লোড করে এই পৃথিবীতে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে?.

একে একে সমস্ত পৃথিবীত যেন ছেয়ে যাচ্ছে করোনা ভাইরাসে। করোনা ভাইরাস থেকে জীবন বাঁচাতে সবাই দৌড়াচ্ছে পৃথিবী এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। সবার মতো আমি দৌড়াচ্ছি এবং হাঁপাচ্ছি নিজের জীবন রক্ষা করতে। মনের মধ্যে সর্বদাই একটি সংশয়, এই বুঝি করোনা ভাইরাস আমাকে ধরে ফেলল। আর আমি পৃথিবীর উদ্দেশ্যে বলছি, আমি মরতে চাই না, আমি বাঁচতে চাই। বাঁচাও, বাঁচাও,বাঁচাও।

এই খোকা, ঘুমের মধ্যে এগুলো আবল তাবল কি বকতেছিস। এই খোকা, উঠ। সকাল হয়ে গেছে।

দেশ-ইনসাইডার/এ.আর