ছবি সংগ্রহীত
সম্রাট শাহজাহান বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, স্ত্রী মমতাজ বেগমের স্বামীকে হত্যা করে মমতাজকে পাওয়ার জন্য।
সম্রাট শাহজাহানের সম্পুর্ন নাম শাহাবুদ্দিন মুহাম্মদ শাজাহান। তিনি ছিলেন পঞ্চম মুঘল সম্রাট।শাহজাহান ফার্সি শব্দ থেকে এসেছে যার আর্থ পৃথিবীর রাজা। সিংহাসন পাওয়ার আগে তার নাম’ খুররাম ‘ হিসেবে পরিচিত ছিলো। সিংহাসন আরহনের পর তার নতুন নাম হয় “আবুল মুজাফফর শিহাবুদ্দিন মুহাম্মদ শাজাহান সাহিব কিরান-ই- সানী”। ১৬২৮ সাল থেকে ১৬৬৫ সাল পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশে তার শাসনকাল ছিলো। অন্য সম্রাটদের থেকে তার জনপ্রিয়তা বেশি, যিনি ভালোবাসার মমতাজের জন্য তাজমহল তৈরি করে পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ইতিহাস থেকে যানা যায় ৫ জানুয়ারি ১৫৯২ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং স্ত্রী তাজবিবি মনমতি ওরফে বিলকিস মাকানির গর্ভে পাকিস্তানের লাহোরে শাহজাহানের জন্ম হয়। মৃত্যু জানুয়ারি ২২, ১৬৬৬।
বাল্যকালে তিনি দাদা আকবরের প্রিয়পাত্র ছিলেন। তাকে মোগল সাম্রাজ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার শাসনামলকে স্বর্ণযুগ বলা হয় এবং তার সময়ে ভারতীয় সভ্যতা সবচেয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে। দাদা আকবরের মতো তিনিও তার সাম্রাজ্য প্রসারিত করতে আগ্রহী ছিলেন। ১৬৫৮ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুত্র আওরঙ্গজেব তাকে বন্দী করেন এবং বন্দী অবস্থায় ১৬৬৬ সালে আগ্রা ফোর্ট -এ তার মৃত্যু হয়। শাহজাহান অনেক শোভামণ্ডিত স্থাপনা তৈরী করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্রার তাজমহল তার স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধি হিসাবে পরিচিত (নির্মাণ ১৬৩২-১৬৫৪ সাল)।
‘শাহজাহান’ নামটি শুনলে প্রথমেই তাজমহলের কথা চলে আসে। তাজমহলের মতো ভালোবাসার প্রতীক নির্মাণ করার পাশাপাশি এমন আরও অনেক তথ্য রয়েছে যেগুলো আমরা অনেকেই জানি না। চলুন সম্রাট শাহজাহান সম্পর্কে অজানা এবং মজার এমন কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
তাজমহল কার ছিলোঃ সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজকে অনেক ভালোবাসতেন। ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন সম্রাট । তবে এই ব্যাপারটি নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে । পিএন অক নামের এক প্রফেসর তার “তাজমহল: দ্য ট্রু স্টোরিতে” শাহজাহান ও মমতাজের ভালোবাসার গল্প কতটা সত্য সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তার লেখায় তিনি উল্লেখ করেন, মমতাজ ও শাহজাহানের ভালোবাসার গল্প মূলত রূপকথা যা লোকমুখে সৃষ্ট হয়। কারণ এত গভীর ও চমৎকার প্রেমের কথা ভারতের ওই সময়কার কোন সরকারি নথিপত্রে বা গ্রন্থে উল্লেখ নেই। তিনি তাজমহলের কার্বন টেস্ট করে যে তথ্য পান, এই কার্বন সম্রাট শাহ জাহানের শাসনামলেরও চেয়ে ৩০০ বছর বেশি পুরনো ছিলো! এছাড়া রহস্যের আরেকটি ব্যাপার হলো কোনো এক ইউরোপীয়ান পর্যটক ১৬৩৮ সালে আগ্রা ভ্রমণ করেন। সময়টি শাহজাহানের স্ত্রী মমতাজের মারা যাওয়ার মাত্র ৭ বছর পর। কিন্তু তিনি তার লিখিত ভারতবর্ষ ভ্রমণ গ্রন্থে তাজমহল নামক প্রাসাদের কথাই উল্লেখ করেননি। তাই, শাহজাহান আসলেও তাজমহল বানিয়েছিলেন কিনা সেটা নিয়ে কিন্তু একটা সন্দেহ থেকেই যায়।
সম্রাট শাহজাহানের ভালোবাসা কেমন ছিলোঃ শাহজাহানের সাথে বিয়ে হওয়ার আগেও মমতাজের বিয়ে হয়েছিল এবং সম্রাট শাহজাহান মমতাজের সেই স্বামীকে হত্যা করে তারপর মমতাজকে বিয়ে করে। শুধু তাই নয়, মমতাজের আগেও সম্রাট শাহজাহানের আরও ৩ জন স্ত্রী ছিলেন এবং মমতাজকে বিয়ে করার পরও সম্রাট শাহজাহান আরও তিনটি বিয়ে করেন। এমনকি মমতাজ মারা যাওয়ার পর শাহজাহান মমতাজের আপন ছোট বোনকে বিয়ে করেছিলেন ।
সিংহাসনে আসার লড়াইঃ মুঘল এমন খুব কম সম্রাট আছেন, যাদের সন্তানেরা ক্ষমতা দখলের জন্য বাবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি। কিন্তু শাহ জাহানের সময় ব্যাপারটা অনেক বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়। কেবল বাবার বিরুদ্ধে নয়, শাহ জাহানের ছেলেরা নিজেদের মধ্যেও যুদ্ধ শুরু করে সিংহাসনের জন্য। ১৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট শাহজাহান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ৬ই সেপ্টেম্বর এই সংবাদ রাজ্যময় ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় আগ্রাতে ছিলেন যুবরাজ দারাশিকো। শাহজাহানের চার সন্তানের ভিতর সিংহাসন দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। শাহজাহান সবার সম্মুখে দারাকে সিংহাসনের উত্তরাধিকার করেন। এই সংবাদ শোনার পর মুরাদ, আওরঙ্গজেব এবং সুজা রেগে যান। তারা আলাদা আলাদাভাবে সিংহাসন দখলের জন্য প্রস্তুতি নেন। শুরু হয় যুদ্ধ।
ময়ূর সিংহাসনঃ নিজের বিজয়কে উদযাপনের জন্য তাখত-এ-তাউস বা ময়ূর সিংহাসন নামের একটি আলাদা সিংহাসন তৈরি করেন শাহজাহান।
হয়তো এরকম ব্যাপারে অনেকের মন নড়েচড়ে যেতে পারে তবে ইতিহাসে এরকমই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।