আরিফুল ইসলাম:

জয় বাংলা,
চতুর্দিকে হাসি আর কান্না- কষ্টের কান্না নয়, আবেগের কান্না, সুখের কান্না।এই কান্না বিজয়ের কান্না, এই কান্না স্বাধীনতার কান্না। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জয় লাভ করে পাকিস্তানি বাহিনীদের পরাজয় করার আনন্দে আজ বাংলাদেশের চোখ অশ্রুসিক্ত। আজ থেকে আমরা স্বাধীন। আমাদেরকে কেউ জুলুম, অত্যাচার করতে পারবে না।আমরা সবাই সমান অধিকার ভোগ করবো, থাকবে না কোন বৈষম্য, শ্রেণী বিভাজন। জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু।

১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি দেশ উদিত হয় যার নাম লাল-সবুজের বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয়।

“রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।
এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।

জয় বাংলা।”
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে শক্তি নিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটি সৃষ্টি করতে লক্ষ লক্ষ মানুষ হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। মার্চ থেকে ডিসেম্বর প্রায় ৩০ লক্ষ প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ছিনিয়ে আনে মহান স্বাধীনতা।

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। আমরা স্বাধীন এক জাতি। আমরা বাংলাদেশী, আমাদের এই স্বতন্ত্র পরিচয় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরেই এসেছে।তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছিলো।

কিন্তু আমরা কি মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া মহান স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে পারছি?.যাদের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনলাম, তারাই এই স্বাধীন দেশে নৃশংসভাবে হত্যা হলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারকে গুলি করে হত্যা করা হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা লন্ডনে অবস্থান করায় তারা বেঁচে গিয়েছিলো।জাতীয় চার নেতাকে কারাবন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়। যাদের স্বপ্ন ছিলো নবজাতক এই বাংলাদেশকে একটি সাম্য,স্বাধীনতা, শোষণহীন সমাজ উপহার দেওয়া।আর সেই দেশেই তৈরি হলো শোষণ, বৈষম্যময় একটি সমাজ।জাতীয় স্বার্থ নিয়ে কাজ করার পরিবর্তে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া শুরু হলো। যারা একটি স্বচ্ছ দেশ সৃষ্টি করার জন্য শহীদ হলো, আজ সেই দেশ দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ। যেখানে আমলাতন্ত্র জনগণের সেবা করার কথা, সেখানে তাদেরকে দেখলেই জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। সরকারি চাকরি মানেই ঘুষ।সব জায়গায় ক্ষমতার অপব্যবহার। স্থানীয়,জাতীয়, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করার অপচেষ্টায় নিয়োজিত। এক শ্রেণীর মানুষ দেশীয় সম্পদ বিদেশে প্রাচার করছে,কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করার জন্য সুইস ব্যাংকে জমা রাখছে।যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ছিলো সাম্য ও বৈষম্যহীন একটা দেশ গঠন করা, আজ সেই স্বাধীন দেশেই উচু শ্রেণী কর্তৃক নিচু শ্রেণীর লোকেরা শোষিত হচ্ছে। হ্যা,বাংলাদেশ স্বাধীন কিন্তু ক্ষমতার কাছে পরাধীন। ১৯৭১ সালে শহীদ ও গাজীদের উপহার দেওয়া এই স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

একটি প্রবাদ আমরা সবাই জানি, “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।”
জয় বাংলা।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।